৪০০ জনকে লিবিয়া পাঠান কামাল উদ্দিন

অনলাইন ডেস্ক ◑  লিবিয়ায় মানব পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার চারটি থানায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় করা মামলায় এক আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মাদারীপুরে মামলা হয়েছে তিনটি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু’জনকে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় মামলা করেছেন নিহত সুজন মৃধার বাবা কাবুল মৃধা।

মাদারীপুরে মামলার প্রধান অভিযুক্ত করোনায় আক্রান্ত। এরই মধ্যে মানব পাচারের এক হোতা কামাল উদ্দিন ওরফে হাজি কামালকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩। গতকাল সোমবার ভোরে রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুরে র‌্যাব-৩-এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব জানিয়েছে, সম্প্রতি লিবিয়ায় পাচার হয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে বড় একটা অংশকেই এই কামাল পাচার করেছিল। ওই ব্যক্তিদের পাচারের পর অপহরণ করে বাংলাদেশে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকাও আদায় করে সে। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, মানব পাচারের পাশাপাশি কামাল একজন ঠিকাদার। বহু টাইলস শ্রমিক তার সংস্পর্শে আসে। এ সুযোগে সে তাদের প্রলুব্ধ করে। এ পর্যন্ত সে ফাঁদে ফেলে অন্তত ৪০০ বাংলাদেশিকে লিবিয়া পাঠিয়েছে। লিবিয়া ছাড়াও সে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে লোক পাঠায়। কামালের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলীতে র‌্যাব-৩-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়। সেখানে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান জানান, হাজি কামালের মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটে আরও ১০ জনের তথ্য পেয়েছেন তারা। গ্রেপ্তার ব্যক্তি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মানব পাচারের বিষয়ে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশি নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এবং ১১ বাংলাদেশি আহত হন। এর পরই তাদের পাচারের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সন্ধানে নামে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় মানব পাচারের মূল হোতা হাজি কামাল ও তার সিন্ডিকেট শনাক্ত হয়।

তিনি বলেন, লিবিয়ার ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ছায়াতদন্ত করতে গিয়ে তারা দেখেন, বিভিন্ন দালাল চক্র ইউরোপে উন্নত জীবনের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে নৌপথ এবং দুর্গম মরুপথ দিয়ে বিভিন্ন দেশে পাচার করে। পাচার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জিম্মি করে প্রতিনিয়ত মুক্তিপণ দাবি এবং শারীরিক নির্যাতন করে আসছে দালাল চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয় ওই ২৬ বাংলাদেশিকে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জে পৃথক দুটি মামলা হয়।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হাজি কামাল জানিয়েছেন, তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এই মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। তার পরিচালিত চক্রটি বিদেশি চক্রের যোগসাজশে এসব অবৈধ কাজ করে আসছিল।